ম্যট্রিক্স কি তবে নাস্তিকদের বুমেরাং?

matrix, Elon mask, Simulation hypothesis, Virtual reality, reality, mukit, মুকিত , Heyali, হেঁয়ালি, নাস্তিক, আস্তিক, নাস্তিকতা নাস্তিকতাবাদ,

ম্যাট্রিক্স কি?

ম্যাট্রিক্স সিনেমার কথা মনে আছে?

যেখানে দেখানো হয় মানুষ উন্নতি করতে করতে এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেছে যখন রোবটরা প্রায় মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা অর্জন করে ফেলে।প্রত্যেক মানুষের মাথার পিছনে একটি কম্পিউটার ক্যাবল দিয়ে কানেকশন দেয়া। তার মাধ্যমে তাদের কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা সৃষ্টি করা ভার্চুয়াল জগতে বাস করানো হয়। এই ভার্চুয়াল জগৎটাই মুলত দ্যা ম্যাট্রিক্স।যেখানে আসলে সত্যিকার মানুষ বাস করেনা,তাদেরকে প্রোগ্রামিং করা ভার্চুয়াল পৃথিবীতে বসবাস করানো হয়। আর তারা মনে করে এটাই বাস্তবতা। একদল মানুষের এরকম জেগে ওঠা,একত্র হওয়া এবং বাকি মানুষদেরকে বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনার জন্য মেশিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমেই মুভির প্লট এগিয়ে যেতে থাকে। আচ্ছা আমরা যে ম্যাট্রিক্সের মত কোন কম্পিউটার সিমুলেশন এর মধ্যে বসবাস করছি না তার প্রমাণ কি? ভাবছেন হঠাৎ এই আজগুবি বিষয়ে খোঁচাখুঁচি কেন? আছে।  কারণ আছে।
ম্যাটিক্স নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কেঁচো খুড়তে সাপ বের হবার দশা। সিনেমার বাইরে আসলে ম্যাট্রিক্স এর ধারণাটা কি! আসুন দেখি। প্রথমেই বলি ম্যাট্রিক্সের আসল নাম মূলত সিমুলেশন হাইপোথিসিস। এই তত্ত্বমতে আমাদের চারপাশের এই পৃথিবী, এই শহর, চারপাশের প্রকৃতি, আমি আপনি-মানুষ-প্রাণী, কোন কিছুর বাস্তব অস্তিত্ব নেই। বরঞ্চ আমরা এক কম্পিউটার প্রোগ্রামের মধ্যে আছি। আর এই কম্পিউটার চালাচ্ছে কে? কোন এক বিশেষ বুদ্ধি সম্পন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। সেই প্রোগ্রামার তার খেয়াল খুশি মত আমাদের চারপাশের এই পরিবেশকে তৈরী করে নিয়েছে। প্রয়োজনমত সেই প্রোগ্রামার ই আমাদের চারপাশের বাস্তবতা নির্ধারণ করে, বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটায়, ঝড় তুফান তৈরী করে, এমনকি যুদ্ধ বিগ্রহও নাকি সেই বাধায়।

আমাদের চারপাশের এই রিয়ালিটির স্বরূপ আসলে কেমন এই নিয়ে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য বিজ্ঞানী-দার্শনিক মহলে তর্ক চিন্তা বহু দিনের। বিভিন্ন জন তাদের মত করে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন ।

আমাদের চারপাশের রিয়ালিটি ব্যাখ্যায় নাস্তিক বিজ্ঞানীদের সিমুলেশন তত্ত্ব কিভাবে যে তাদের জন্য বুমেরাং হচ্ছে সেটা আলোচনা করতে এলাম।

সিমুলেশন হাইপোথেসিস এর কথা সর্বপ্রথম নিয়ে আসেন,  অক্সফোর্ডের দার্শনিক, পদার্থবিদ Nick Bostrom।  তিনি কল্পনা করেন,  তথ্য প্রযুক্তিতে অগ্রসর এমন এক সভ্যতা, যারা তাদের বিশাল বুদ্ধিমান কম্পিউটারের মধ্যে বোধশক্তি সম্পন্ন সত্তা তৈরী করেছে। এই ধারণার বড় প্রচারক আবার  Scientific American পত্রিকা।  তারা একের পর এক আর্টিকেল পাবলিশ করেছে এই মতবাদের সপক্ষে। এদিকে Elon mask তো বলেই বসল আমাদের নাকি ৯৯.৯৯% সম্ভাবনা যে আমরা কোন না কোন কম্পিউটার সিমুলেশন এর মধ্যে আছি

সিমুলেশন হাইপোথেসিস নিয়ে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক David Chalmers একটা বই লিখেছেন Reality + নামে।  David Chalmers কোন হঠকারী লোক না। বর্তমান বিশ্বের প্রথম সারির দার্শনিক বলা চলে।  সুতরাং তিনি যখন একটা বই লিখেছেন তখন এটা নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই আজগুবি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের কিছু আজগুবি ধারণার আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

আসুন বিজ্ঞানের দৃষ্টি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি।
বিজ্ঞান আসলে এই ধরণের কোন ম্যাট্রিক্সের অস্তিত্ব প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করতে ব্যার্থ।  ফিজিক্যাল রিয়ালিটি আর সিমুলেশন রিয়ালিটি নিয়ে বেশ বড় একটা পেপার লেখেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জোতির্বিদ ডেভিড কিপিং।  তিনি তার গবেষণায় বায়েসিয়ান রিসোনিং ব্যবহার করেন। কিন্তু অনেক যুক্তি তর্ক দিয়েও তিনি শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত দেন,  এই পৃথিবী যে আসলেই অস্তিত্বশীল সেটা বলা সম্ভব না। আরো ভালো ভাবে বললে,  ফিজিক্যাল রিয়ালিটি আর সিমুলেশন রিয়ালিটি- দুটোর সম্ভাবনায় ৫০ – ৫০। একটা কয়েনকে উপরে ছুড়ে দিলে মাটিতে পড়ার পর যেকোন রেজাল্ট আসার সম্ভাবনা যেমন, আমাদের এই পৃথিবীর বাস্তব অস্তিত্বও ঠিক সেরকম। তাহলে কিছু প্রশ্ন এসে যায়?

  • সেই প্রোগ্রামার কোথায় বসে এই সিমুলেশন চালাচ্ছে?
  • কি ধরণের কম্পিউটার,  কি ধরণের সফটওয়ার এর মাধ্যমে এই সিমুলেশন চলছে।
  • এই রকম কি একটাই সিমুলশেন আছে নাকি আরো আছে? যদি থাকে সেই সব সিমুলেশন এ কি আবার আমরাই আছি নাকি আমাদের মত অন্য কোন প্রজাতি? তারা দেখতে কেমন?
  • কিভাবে শুরু হল এই সিমুলেশন? আর কিভাবেই বা শেষ হবে?
  • আর সর্বোপরি,  কে সৃষ্টি করল সে প্রোগ্রামার কে? নাকি সে নিজেও অন্য কোন সিমুলেশন এর মধ্যে?

অর্থাৎ, আমরা বাস্তব জগতে আছি নাকি কম্পিউটার সিমুলেশন এর মধ্যে আছি বিজ্ঞান সেটা প্রমাণ করতে পারবে না।

কিন্তু এভাবে আগালে আমাদের চেতনা,  আমাদের নৈতিকতা সব আপেক্ষিক হয়ে যায়। কারণ সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামার যেটা নীতি হিসেবে সেট করবে সেটাই বাস্তব সেটাই নৈতিক। এখানে আলাদা কোন নীতি থাকা সম্ভব না।আবার এর পক্ষে বিপক্ষে যেই প্রমান ই হাজির করা হোক না কেন সেটা গ্রহনযোগ্য নয় কারণ সেই প্রমান  প্রোগ্রামার এর নিজের বানানো হতে পারে।

আবার আরেকটা জটিলতা তৈরী হচ্ছে বিজ্ঞানের সূত্র গুলোর বেলায়।  সুতরাং বিজ্ঞানকে এক রকম জোর করেই বিশ্বাস (সঠিক প্রমাণ বা অপ্রমাণ এর অভাবে) করে নিতে হচ্ছে আমাদের এই চারপাশে পরিবেশ বাস্তবেই অস্তিত্বশীল। এখানে গোড়াতেই বিজ্ঞানের একটা বড় দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। তাইতো দেখি বিজ্ঞানকে অনেক অলি গলি ঘুরে  শেষ পর্যন্ত বলতে হচ্ছে,” Reality is not a simulation.”

matrix, Elon mask, Simulation hypothesis, Virtual reality, reality, mukit, মুকিত , Heyali, হেঁয়ালি, নাস্তিক, আস্তিক, নাস্তিকতা নাস্তিকতাবাদ,
আমরা কি আসলেই কম্পিউটার সিমুলেশন এ বন্দি?

কিছু মানুষ তাদের চিন্তা দিয়ে দিয়ে বুঝতে চেয়েছেন আমরা কি আসলেই কম্পিউটার সিমুলেশন এর মধ্যে আছি? আচ্ছা এক মিনিট ভেবে দেখুব তো এই হাইপোথিসিস কি বলতে চাই! আমাদের এই দৃশ্যমান সবুজ শ্যামল পৃথিবী, যা কিনা সূর্য থেকে একদম সঠিক দুরত্বে অবস্থিত। যাকে আমরা দেখি, অনুভবে সুখ পাই, সেই পৃথিবী কিনা আমাদের থেকেও বুদ্ধিমান কোন কম্পিউটার প্রোগ্রামার নিজের হাতে সুচতুর ভাবে তৈরী করেছে।  মানে its designed. Its planned.  সেই প্রোগ্রামার আমাদের থেকে অসীম ক্ষমতা সম্পন্য ( কারণ সে তার ইচ্ছা মত সবকিছু চালাচ্ছে, কোথাও বৃষ্টি তৈরী করছে, কোথাও লাগাচ্ছে যুদ্ধ, আবার তার পছন্দ না হলে যে কোন সময় সে এই প্রোগ্রাম বন্ধও করে দিতে পারে।  আবার তাকে সর্বজ্ঞও হওয়া লাগবে কারণ তাকে এই পৃথিবীর সব মানুষকে দেখতে হচ্ছে, যে যেই রিয়ালিটিতে যেতে চাই তাকে তখন সেই রিয়ালিটি ক্রিয়েট করে দিতে হচ্ছে। সে নিশ্চয় এই পৃথিবীর বাইরে বসে এই পৃথিবীকে চালাচ্ছে, এবং তার এই প্রোগ্রাম চালানোর নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য আছে, সেটতা যত হীণ কারণে হোক না কেন। এইতো পড়ে গেলেন গ্যাড়াকলে।খুব অদ্ভুত ব্যাপার হলেও সত্যি সিমুলেশন হাইপোথেসিস টেকনোহলিক নাস্তিক দের মধ্যে  বিশ্বাসের ধারণা কে আবার নতুন ভাবে নিয়ে আসছে। David Chalmers স্বীকার করেছেন, সিমুলেশন হাইপোথিসিস আস্তিকতার দিকে, বিশ্বাসের দিকে ইংগিত করে।
তার ভাষাতে, The simulation hypothesis has made me take the existence of a god more seriously than I ever had before,”

কিন্তু এই বিশ্বাস যেন আবার ঈশ্বরে বিশ্বাস না হয় তার জন্য আবার তাকে কিছুটা চতুরতার আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার দাবি কোন দেবতার পুজা না করলে নাকি কেউ ধার্মিক হবে না। শালমার্স শব্দের খেলায় আস্তিকতার সজ্ঞায় পরিবর্তন করে দিয়েছেন।

আমার মনে হয় তাদের সামনে সকল উদাহরণ চলে এলেও নাস্তিকতার প্রতি দায় বদ্ধতার জন্য এক মহান ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে পারবে না।

ভাবতে অবাক লাগে যারা নাস্তিকতায় বিশ্বাসের কারণে তারা এক অতিমানবিক স্বত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করতে পারে না। তারাই আবার কোন রকম প্রমাণ ছাড়া এই পৃথিবীতে তাদের বাস্তব অস্তিত্বে বিশ্বাস করে নেই। কম্পিউটার প্রোগ্রামের ভিতর ঢুকিয়ে এক বুদ্ধিমান কম্পিউটার প্রোগ্রামারের কলকাঠি তাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আবার এ এমন এক উভয় সংকট যেখানে তারা সেই প্রোগ্রামার কে বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ আবার বাতিল ও করতে পারছে না। এসব বিষয় নিয়ে তারা অন্ধকারের মত চুপ। এদের সিলেকটিভ নাস্তিক বলা যায়।

বংগীয় নাস্তিক কুল অবশ্য এই সব বিষয় নিয়ে বেশি টানা হেচড়া করবে না। কারণ তাদের নিজেদের স্ব ইচ্ছায় যে বুদ হয়ে উবে যায়। তাদের স্ব ইচ্ছা, তাদের মুক্ত চিন্তা যে সেই অতি বুদ্ধি সম্পন্য প্রোগ্রামারের হাতে বন্ধক দেয়া লাগে।

কিন্তু আমরা যেহেতু কোরআনে বিশ্বাস রাখি। এবং বিশ্বাস করছি এই পৃথিবীর বাস্তব অস্তিত্ব আছে।বিশ্বাস রাখি এক অতিমানবীয় সর্বজ্ঞ স্বত্তা সবকিছু চালাচ্ছে। সুতরাং “we are not real” হতে পারব না।

We actually exists in this world

Dr. Sheikh Abdullah Al Mukit
ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মুকিত, পেশায় চিকিৎসক হলেও নেশা পড়াশোনা আর লেখালেখি। বেড়ে ওঠা আপামর বাংলার মফস্বল শহরে। ভার্চুয়াল জগতে লেখালেখির শুরু মেডিকেল ছাত্রাবস্থায়(যদিও অনেক লেখায় হারিয়ে গেছে, লেখাগুলো সংগ্রহে রাখাও এই ব্লগের উদ্দেশ্য!) প্রথম থেকেই মানুষের শরীরে ঘটে চলা সূক্ষাতিসূক্ষ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অভিভূত করেছে, মিলেছে এক মহা-কারিগরের আভাস। ক্রমেই সেল বায়োলজির বিষয় গুলো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। পাশাপাশি বিজ্ঞানের সঠিক কার্যধারা জানতেও উদগ্রীব হয়ে উঠি। পড়াশোনা করছি বিজ্ঞানের স্বরূপ এবং দর্শন নিয়ে। শিক্ষাজীবন খুব বর্ণাঢ্য না হলেও ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে এম বিবিএস পাশ করে আশির্বাদপুষ্ট হয়। বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়াশোনা করছি। ইচ্ছা আছে ক্যান্সার চিকিৎসা এবং সেল বায়োলজি নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণার মূল চালিকা শক্তি স্রষ্টার নৈকট্য হাসিল। অতঃপর বিজ্ঞানের সঠিক স্বরূপ মানুষের সামনে মেলে ধরা।